নতুন কারিকুলাম বাতিল এবং নম্বরভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর
দাবিতে আগামী ৫ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ও দেশের সব জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি
দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২২ ডিসেম্বর অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে মতবিনিময় সভারও আয়োজন
করা হবে।
২৪
নভেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক মানববন্ধন শেষে এই কর্মসূচী
ঘোষণা করা হয়। নতুন কারিকুলাম বাতিলসহ আটদফা দাবি নিয়ে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের
ব্যানারে এ মানববন্ধন করে একদল অভিভাবক।
মানববন্ধনে
সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা বলেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা
তাত্ত্বিক কিছুই শিখছে না। গুগলের সহায়তায় তারা বিভিন্ন কাজ কপি করে জমা দিচ্ছে।
তাছাড়া কারিকুলামে বিজ্ঞান ও গণিতের পরিসর সংকোচন করা হয়েছে। ফলে বিদেশে গিয়ে যারা
উচ্চশিক্ষা নিতে চায়, তাদের সুযোগ কমে গেছে।
তিনি
বলেন, বলা হচ্ছে বিদেশের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে।
কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের মান, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত,
শ্রেণীকক্ষ সংখ্যা কোনটিই বিদেশের মতো অবস্থায় নেই। নতুন কারিকুলামে এসব বাস্তবতা
বিবেচনা করা হয়নি।
সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ডালিয়া পারভীন বলেন,
আমার ছেলেকে বিজ্ঞান পরীক্ষায় বাসার এসি-ফ্রিজের মতো যেকোনো একটি ডিভাইসের ওপর
পোস্টার বানিয়ে নিতে বলা হয়েছে। সে ইন্টারনেট থেকে দেখে দেখে পোস্টার বানিয়েছে।
কিন্তু গ্রামের একটা শিক্ষার্থীর এ ধরনের ডিভাইস বা ইন্টারনেট সার্ভিস নেই।
কারিকুলামে কি গ্রামের কৃষক-শ্রমিকের সন্তানের কথা বিবেচনা করা হয়েছে? হয়নি।
মতিঝিল
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীর অভিভাবক শাহ আলম বলেন, আমরা জানতাম
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণ করার পর একটি জাতি যে মেরুদণ্ডহীন হতে
পারে, তার ব্যবস্থা এই নতুন কারিকুলাম করেছে।
আরেক
অভিভাবক ফাতেমা সুলতানা বলেন, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘসময় অনলাইনে থাকতে হচ্ছে। একজন
শিক্ষার্থী কোন সাইটে যাচ্ছে, কী দেখছে তার প্রতি সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখা তো
অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের অনেকেই অল্প বয়সে বিভিন্ন নিষিদ্ধ সাইটে চলে যেতে
পারে। তাছাড়া নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে।
সম্পূর্ণ মূল্যায়ন শিক্ষকের হাতে থাকায় ভালো পড়ানোর যে তাড়না, তাও শিক্ষকরা হারিয়ে
ফেলবেন।
নবাব কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোহাম্মদ মুসলিম
বলেন, কারিকুলাম অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু তা তৈরিতে কতজন অভিভাবক,
শিক্ষক, শিক্ষাবিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে? এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থীরা
সার্টিফিকেটধারী শ্রমিক হবে। নতুন শিক্ষাক্রম হবে সার্টিফিকেটধারী শ্রমিক তৈরির
কারখানা। পরে দেশের বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিক লোক এনে দেশ পরিচালনা করতে হবে।
অভিভাবকদের
দাবির মধ্যে রয়েছে – শিক্ষানীতিবিরোধী নতুন কারিকুলাম
সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে; নম্বরভিত্তিক দুইটি সাময়িক লিখিত পরীক্ষা (৬০ নম্বর) চালু
রাখতে হবে এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন হিসেবে ৪০ নম্বর রাখতে হবে; নবম শ্রেণী থেকেই শিক্ষার্থীর
আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের সুযোগ অথবা বিজ্ঞান বিভাগ রাখতে হবে; ত্রিভুজ, বৃত্ত,
চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বাতিল করে নম্বর ও গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখতে হবে।
এ ছাড়াও
রয়েছে- সব সময়ে সকল শিখন, প্রজেক্ট ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ক্লাসের ব্যয় সরকারকে বহন
করতে হবে এবং স্কুল পিরিয়ডেই সকল প্রজেক্ট সম্পন্ন হতে হবে; শিক্ষার্থীদের দলগত ও
প্রজেক্টের কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করতে হবে এবং তাত্ত্বিক বিষয়ে
অধ্যয়নমুখী করতে হবে; প্রতি বছর ক্লাসে নিবন্ধন ও সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে
হবে, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখতে হবে এবং এসএসসি ও এইচএসসি দুইটি
পাবলিক পরীক্ষা বহাল রাখতে হবে; সব শ্রেণীতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে
অবশ্যই তা মন্ত্রিপরিষদ ও সংসদে উত্থাপন করতে হবে।
সম্মিলিত
শিক্ষা আন্দোলনের দাবিগুলো হলো-
১.
শিক্ষানীতি বিরোধী নতুন কারিকুলাম সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে।
২. নম্বরভিত্তিক দুটি সাময়িক লিখিত পরীক্ষা (৬০ নম্বর) চালু রাখতে হবে এবং
ধারাবাহিক মূল্যায়ন হিসেবে ৪০ নম্বর রাখতে হবে।
৩. নবম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের সুযোগ অথবা
বিজ্ঞান বিভাগ রাখতে হবে।
৪. ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বা ইন্ডিকেটর বাতিল করে নম্বর ও
গ্রেডভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখতে হবে।
৫. সবসময় সব শিখন, প্রোজেক্ট ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক ক্লাসের ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে
এবং স্কুল পিরিয়ডেই সব প্রোজেক্ট সম্পন্ন হতে হবে।
৬. শিক্ষার্থীদের দলগত ও প্রোজেক্টের কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করতে হবে এবং
তাত্ত্বিক বিষয়ে অধ্যয়নমুখী করতে হবে।
৭. প্রতিবছর প্রতি ক্লাসে নিবন্ধন ও সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে,
প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখতে হবে এবং এসএসসি ও এইচএসসি দুটি
পাবলিক পরীক্ষা বহাল রাখতে হবে।
৮. সবসময় সব শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রিপরিষদ ও
সংসদে উত্থাপন করতে হবে।