আশির
দশকের মাঝামাঝি সময়ে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ে বলিউডের জগতে পা রাখেন কিমি কাটকর।
এরপরই রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন এই অভিনেত্রী। কিন্তু তার সেই জনপ্রিয়তা নিয়ে
বলিউডে রাজ করতে পারেননি।
মুম্বাইয়ে
জন্ম কিমির আসল নাম ছিল নয়নতারা। কিন্তু অভিনয়ের জগতে পা রেখেই বদলে ফেলন নাম।
নয়নতারা থেকে হয়ে যান কিমি কাটকর।
মাত্র ১৭
বছর বয়সেই মডেলিং জগতে পা রাখেন কিমি। এরপর ১৯৮৫ সালে ‘পাত্থর
দিল’ সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। সেই সময় বলি পরিচালক
বব্বর সুভাষ ‘অ্যাডভেঞ্চার্স অফ টারজান’
সিনেমার নায়িকার চরিত্রের জন্য পছন্দ করেন কিমিকে। যেখানে সাহসী দৃশ্য অভিনয় করেন তিনি।
ওই বছরেই
প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘মার্দ’
এবং ঋষি কাপুর অভিনীত ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’
সিনেমা। বলিউডের প্রভাবশালী ওই দুই অভিনেতার সিনেমার সঙ্গেই টক্কর দেয় কিমির ‘অ্যাডভেঞ্চার্স
অফ টারজান’। মূলত এই অভিনেত্রীকে দেখতেই প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমান
দর্শক। এরপরই ‘টারজান গার্ল’ হিসেবে পরিচিত পান অভিনেত্রী।
বলিপাড়ায়
কানাঘুষো শোনা যায়, সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে নাকি হরহামেশাই পরকীয়া সম্পর্কে জড়াতেন
কিমি। অনিল এবং জ্যাকি— দুই অভিনেতাই যখন বিবাহিত ছিলেন,
সে সময় কিমি তাদের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন।
এমনকি,
মণীশ বহালের সঙ্গে নাকি গোপনে বাগদান পর্বও সেরে ফেলেছিলেন। ড্যানি ডেনজংপা, সঞ্জয়
দত্ত এবং গোবিন্দের সঙ্গেও নাকি প্রেম করতেন কিমি। যদিও এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কখনো
মুখ খুলেননি অভিনেত্রী।
১৯৯১
সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় মুকুল এস আনন্দ পরিচালিত ‘হাম’
সিনেমাটি। এই ছবিতে অমিতাভের বিপরীতে একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায়
কিমিকে। মুক্তির পর ছবিটি হিট হওয়ার পাশাপাশি গানটিও হিট হয়। কিন্তু এই ছবিতে
অভিনয় করার সময় হেনস্থার শিকার হন কিমি।
কিমির
অভিযোগ, ‘হাম’ সিনেমার গানের দৃশ্যের জন্য জুনিয়র
আর্টিস্টদের বদলে সাধারণ মানুষদের নেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ের শুটিং চলাকালীন
নাকি ভিড়ে থাকা মানুষেরা অশালীন ভাবে স্পর্শ করেন তাকে। সেই কথা নির্মাতাদের
জানানোর পরেও কোনও লাভ হয়নি।
যদিও ‘হাম’
সিনেমার পরে ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছে যান কিমি। বহু ছবিতে কাজের সুযোগ পেলেও তাকে
সাহসী দৃশ্যেই বেশির ভাগ সময় অভিনয় করতে দেখা যেত। স্বল্প পোশাক পরে অভিনয় করতে
আপত্তি জানাতেন, কিন্তু চরিত্রের প্রয়োজনে তা পরতে বাধ্য হতেন বলে দাবি করেন কিমি।
এই
অভিনেত্রী জানান, একটি সিনেমার শুটিং চলাকালীন অসাবধানতার কারণে তার পোশাক খুলে
যায়। ওই অবস্থাতেই শুটিং করা হয়। এমনকি সিনেমাতেও দৃশ্যটি রাখা হয়। কিমি এবং তার
মা বারবার সেই দৃশ্য বাদ দেওয়ার অনুরোধ করলেও রাজি হননি ছবি নির্মাতারা।
উপায় না
পেয়ে শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হন কিমি এবং তার মা। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। কোনও
দৃশ্য বাদ না দিয়েই মুক্তি পায় ছবিটি। দর্শকও কিমিকে ‘বি
গ্রেড’ ছবির অভিনেত্রী হিসাবে দেখতে শুরু করেন। তখনই অভিনয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত
নেন কিমি। এমনকি যশরাজ ফিল্মসের দু’টি ছবির প্রস্তাবও খারিজ করে দেন।
১৯৯২
সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জুল্ম কি হুকুমত’
ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় কিমিকে। এরপর প্রযোজক শান্তনু শোরেকে বিয়ে করেন
তিনি। তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। এরপর অভিনয় ছেড়ে অস্ট্রেলিয়াতে
চলে যান এই অভিনেত্রী। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে সেখানেই কাটিয়ে দেন বহু বছর।
এরপর
কয়েক বছর আগে ভারতে ফিরে গোয়ায় একটি বাড়ি কিনেছেন অভিনেত্রী। বর্তমানে সেখানেই
স্বামী এবং পুত্রের সঙ্গে থাকেন তিনি। অধিকাংশের দাবি, গোঁয়ার রাস্তাঘাটে
মাঝেমধ্যেই কিমিকে দেখা যায়। কিন্তু তিনি যে আসলে ‘টারজান গার্ল’,
তা বোঝা যায় না।