ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধ
শেষ হলে ভবিষ্যতে কীভাবে গাজা শাসন করা হবে, তার একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট।
তিনি বলেন, ওই এলাকায়
ফিলিস্তিনি শাসন থাকবে সীমিত। হামাস আর গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না এবং ইসরায়েল
সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
তিনি যখন এই পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন, তখন গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। হামাস
পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,গত ২৪ ঘণ্টায় এসব হামলায় কয়েক ডজন মানুষ
মারা গেছেন।
চলতি সপ্তাহে আবার এই
এলাকায় সফরে আসার কথা রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের। তিনি
দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও ইসরায়েলি নেতাদের সাথে আলোচনা করবেন
বলে জানানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার লেবাননের
রাজধানী বৈরুতে হামাসের শীর্ষ নেতা সালেহ আল-আরুরির হত্যাকাণ্ডের পর কঠোর
উত্তেজনার মধ্যেই তার সফরের এই খবর এলো। তার এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী
করা হচ্ছে। ইসরায়েল এই অভিযোগ স্বীকারও করেনি, আবার অস্বীকারও করেনি।
গ্যালান্টের বর্তমান ‘চতুর্মুখী’
পরিকল্পনার আওতায় গাজার সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে থাকবে। বহুজাতিক
একটি বাহিনী ওই এলাকার পুনর্গঠনে কাজ করবে। কারণ ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজায় ব্যাপক
ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পরিকল্পনার আওতায় প্রতিবেশী দেশ মিসরের একটি ভূমিকা থাকবে তবে তা কী হবে, সেটি
এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। কিন্তু নথিতে বলা হয়েছে, পুরো এলাকা পরিচালনার দায়িত্ব
ফিলিস্তিনিদেরও দেওয়া হতে পারে।
গ্যালান্ট বলেছেন, ‘গাজার
বাসিন্দারা ফিলিস্তিনি, তাই ফিলিস্তিনি একটি কাঠামো নেতৃত্বের দায়িত্বে তারা থাকবে।
কিন্তু এখানে শর্ত থাকবে যে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি কোনও শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড বা
হুমকি আসবে না।
গাজার ‘ভবিষ্যৎ’
নিয়ে এই আলোচনায় নিয়ে ইসরায়েলের মধ্যে গভীর মতভেদ দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কিছু কট্টর ডানপন্থি সদস্য বলেছে, ফিলিস্তিনের নাগরিকদের
গাজা ছেড়ে নির্বাসনে চলে যেতে বলা উচিত। আর ওই এলাকায় ইহুদী বসতি আবার গড়ে তোলা উচিত।
বিতর্কিত এই প্রস্তাবকে ‘চরমপন্থি’
এবং ‘অকার্যকর’ বলে উল্লেখ করে তা বাতিল করে দিয়েছে
ওই এলাকার অন্য দেশগুলো যাদের মধ্যে ইসরায়েলের মিত্রদেশও রয়েছে।
যদিও গ্যালান্টের
প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তার অন্য সহকর্মীদের আনা প্রস্তাবের তুলনায় বেশি
বাস্তবসম্পন্ন বলে মনে করা হচ্ছে, তারপরও হয়তো এই প্রস্তাব বাতিল করে দেবেন
ফিলিস্তিনি নেতারা। তারা বলছেন, এই বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ওই এলাকা
পরিচালনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গাজাবাসীর থাকা উচিত।
নেতানিয়াহু অবশ্য গাজা
কিভাবে শাসন করা হবে তা নিয়ে জনসমক্ষে এখনও কোনও ধরনের মন্তব্য করেননি। তিনি
বলেছেন, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে শুরু হওয়া গাজার এই যুদ্ধ এখনও কয়েক
মাস ধরে চলতে পারে।
গ্যালান্টের
পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, গাজায় পরবর্তী ধাপের যুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী
কীভাবে এগিয়ে নেবে, সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলি
প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে আরও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে
এগিয়ে যাবে। সেখানে অভিযান চালানোর পাশাপাশি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা এবং বিমান ও স্থল
হামলা চালানো হবে।
দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি
সামরিক বাহিনী হামাসের নেতাদের খোঁজ পেতে এবং বন্দিদের উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত
রাখবে। বৃহস্পতিবার আইডিএফ বলেছে, গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের গাজা শহর ও খান
ইউনিস শহরে হামলা চালিয়েছে তারা।
তারা বলেছে, তারা ‘সন্ত্রাসী
অবকাঠামোগুলোতে’ হামলা চালিয়েছে এবং কথিত জঙ্গিদের
হত্যা করেছে। তাদের দাবি, ওই ব্যক্তিরা সেনাদের পাশেই বিস্ফোরক ঘটানোর চেষ্টা করছিল।
বিমান হামলার মাধ্যমে প্যালেস্টেনিয়ান ইসলামিক জিহাদের সদস্য মামদুহ লোলোকে হত্যা করার
দাবিও করেছে তারা।
গাজায় থাকা হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, উপত্যকাজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায়
১২৫ জন নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, খান ইউনিসের
পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৯ জন শিশুসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন।
ছোট শহরটিতে ইসরায়েলি
বাহিনী বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘নিরাপদ জায়গা’
বলে ঘোষণা করেছিল। তবে হামাসের এই দাবির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
জামাল হামাদ সালাহ
নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ‘যখন
একটি গোলা এসে তাবুতে আঘাত করে তখন মধ্যরাত এবং আমরা সবাই ঘুমাচ্ছিলাম। ৪*২ এর এই তাঁবুগুলোতে
যারা ঘুমাচ্ছিল তাদের বেশিরভাগই শিশু। আমরা ওখানে একটি মরদেহ পাই যা প্রায় ৪০ মিটার
দূরে গিয়ে ছিটকে পড়েছে।’
সেভ দ্য চিলড্রেনের
দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর জেসন লি বলেছেন, ‘গাজায়
কোনও নিরাপদ জায়গা নেই। শিবির, আশ্রয়কেন্দ্র, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি এবং তথাকথিত ‘নিরাপদ
এলাকা’ যুদ্ধক্ষেত্রের অংশ হওয়া উচিত নয়।
হামাস পরিচালিত
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে বৃহস্পতিবার
পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা ২২ হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা এই উপত্যকার মোট
জনসংখ্যার এক শতাংশের সমান। এলাকাটিতে মোট ২৩ লাখ মানুষ বাস করেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের বন্দুকধারীদের আকস্মিক হামলার পর থেকে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ১২০০ মানুষ নিহত হয়েছিল এবং ২৪০ জনকে বন্দি করা হয়েছিল। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
বিবিসি বাংলা