রোকসানা মনোয়ার : খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে মিনিকেট ও নাজিরশাইল বলে কোনো ধান নেই। তাই এসব নামে চাল বিক্রি অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও জানিয়েছেন, মিনিকেট নামে কোনো চাল বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু বাজার সয়লাব মিনিকেট চালে। বাজারে সারি সারি বস্তায় সাজানো মিনিকেট চাল।
অনেকের মতে ইরি জাতের মোটা চালকে মেশিনের সাহায্যে ছেঁটে পলিশ করে বাজারে ছাড়া হয় চিকন চাল হিসেবে, যার নাম দেওয়া হয়েছে মিনিকেট। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আইনগত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
ব্যবসায়ীদের মতে, মিনিকেট নামে ভারতীয় ধানের জাত থেকেই বাংলাদেশে মিনিকেট চাল উৎপাদিত হচ্ছে। এখানে কৃত্রিমতা নেই। মেশিনে চাল ভেঙে চিকন করা যায় না। কাজেই অভিযোগ ভিত্তিহীন। মিনিকেট চাল বিক্রির অভিযোগে ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেওয়া হবে অন্যায়। তাদের দাবি, যে মেশিনে মোটা চাল চিকন করে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে সেই মেশিনটি কোথায় কোথায় আছে? কারা বসিয়েছেন? সরকার নিশ্চয়ই তা জানে। কেন সেই মেশিনগুলো জব্দ করা হচ্ছে না? আর যারা মেশিন বসিয়েছেন তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না?
অন্যদিকে সরকার বলছে, মোটা চালকে চিকন করে বেশি দামে বিক্রি করা ক্রেতাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারে মিনিকেট নামে কোনো চাল বিক্রি করা যাবে না। বস্তায় লিখতে হবে ধানের জাত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মিনিকেট চাল বিক্রির অভিযোগে বিভিন্ন সুপার শপে অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করছে। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে হাজার হাজার বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হলেও সেখানে অভিযান পরিচালনা করছে না।
সরকারি সূত্র জানায়, কেবল বাংলাদেশেই নয়, ভারতসহ উপমহাদেশের কোথাও মিনিকেট নামে কোনো ধানের জাত নেই। অর্থাৎ যে জাতের ধানটি বিপুল পরিমাণে চাষ হচ্ছে তা মূলত ভারতীয় শতাব্দী জাত। কিছু ক্ষেত্রে জিরাশাইল ধানকেও মিনিকেট হিসেবে ডাকা হয়। মিনিকেট, নাজিরশাইল, কাজললতা চাল আছে কিন্তু ধান নেই। তবে সরকার এমন কথা বললেও কৃষকের কাছে ‘মিনিকেট’ একটি আলাদা ধানের নাম।
ব্যবসায়ীরা জানান, নব্বইয়ের দশকে ভারত থেকে অবৈধভাবে ‘মিনিকেট’ নামের ধানের বীজের আগমন ঘটে বাংলাদেশে। এখন পাঞ্জাব থেকেও এই ধানের বীজ কৃষকরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংগ্রহ করছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকেও নানা জাতের ‘মিনিকেট’ আসছে। আর এর ধাক্কায় দেশি ধানবীজ হেরে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যশোর সদর উপজেলায় এ বছর ২৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ‘মিনিকেট’ নামধারী ধানেরই চাষ হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে দেশি জাতের ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সুবর্ণলতা, বিআর-২৮ ও বিআর-৬৩ অন্যতম।
মিল থেকে মিনিকেট লেখা চাল বাজারে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে দিনাজপুরের মালিক সমিতির সিনিয়র সভাপতি শহীদুর রহমান মোহন বলেন, আমরা ধান কিনি কৃষকের কাছ থেকে। কৃষক ধান বিক্রির সময় যে নাম উল্লেখ করেন আমরা সেটাই বলি। এখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই। সরকার যদি বলে মিনিকেট নামে কোনো চাল বাজারে থাকবে না, তাহলে তাদের অবশ্যই কৃষকের কাছে যেতে হবে। কৃষককে বলতে হবে, এই ধান মিনিকেট নামে বিক্রি করা যাবে না। একই সঙ্গে এই যে চালটা কৃষক আমাদের দেন, সেটার তো কোনো না কোনো নাম আছে, সেটা তাদের জানিয়ে দিতে হবে। মিনিকেট নামে কোনো চাল বাজারে যাবে না, এমন কিছু তারা জানেন কি-না প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।