Logo
শিরোনাম

ডেঙ্গুর গতি-প্রকৃতি ও ভয়াবহতা

প্রকাশিত:শুক্রবার ২১ জুলাই ২০২৩ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা : দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছেএবারের ডেঙ্গুর প্রকোপ ২০১৯ সালের    ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যাবে।মূলত,প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে এবং প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটেছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়স্বাস্থ্য অধিদপ্তর  সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কার্যক্রম বা তৎপরতা অনেকটা দায়সারা গোছের বলে মনে হচ্ছে। ফলে আগামী দিনে ডেঙ্গু  পরিস্থিতি মরামারীর রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

 

ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মকালীন রোগ।এডিস মশার কামড়ে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়।উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বরমাথাব্যথাবমিপেশিতে  গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু 

রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারবলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে।কিছু কিছু ক্ষেত্রে কখনো বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়। ফলে ভিকটিমের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

 

কয়েক প্রজাতির এডিস মশকী (স্ত্রী মশাডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক। যেগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশকী প্রধানতম। ভাইরাসটির পাঁচটি সেরোটাইপ পাওয়া যায়। ভাইরাসটির একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ করলে সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করেকিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে। পরবর্তীতে ভিন্ন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু একটি বৈশ্বিক আপদে পরিণত হয়েছে। এশিয়াদক্ষিণ আমেরিকা  অন্যান্য মহাদেশের ১১০টির অধিক দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রতি বছর পাঁচ থেকে পঞ্চাশ কোটি মানুষ 

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হোন এবং তাদের মাঝে দশ থেকে বিশ হাজারের মতো মারা যায় বলে পরিসংখ্যান থেকে 

জ্ঞাত হওয়া গেছে। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়,  ১৭৭৯ সালে বিশ্বে ডেঙ্গুর প্রথম প্রাদূর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। বিংশ শতকের প্রথমভাগে ডেঙ্গুর ভাইরাস উৎস  সংক্রমণ বিশদভাবে জানা গেছে। মশক নিধনই বর্তমানে 

ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় বলে সনাক্ত করা হয়েছে। সরাসরি ডেঙ্গু ভাইরাসকে লক্ষ্য করে ওষুধ উদ্ভাবনের গবেষণা চলমান রয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশটি অবহেলিত গ্রীষ্মকালীন রোগের একটি হিসেবে ডেঙ্গু চিহ্নিত  করেছে।প্রতি বছর গ্রীষ্ম  বর্ষাকালে আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে ডেঙ্গুর প্রাদূর্ভাব দেখা দেয়। এতে অনেকেই আক্রান্ত হোন এবং প্রাণহানীর ঘটনাও উল্লেখযোগ্যই বলা যায়। এবারো কিন্তু তার অন্যথা হয়নি। অতীত পরিসংখ্যান 

বলছেআমাদের দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ২০১৯ সালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্ 


বর্ষা জরিপের তথ্য বলছেএবারের পরিস্থিতি ২০১৯ সালের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি ভয়াবহ বলেই মনে হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থলের সংখ্যা সর্বোচ্চ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৯ সালে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ড ছিল ২১টি। কিন্তু এই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে উভয় সিটি কর্পোরেশন যেসব ব্যবস্থা বা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা মোটেই পর্যাপ্ত  কার্যকর নয়। ফলে দিনের পর দিন পরিস্থিতির অবনতিই হচ্ছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছেপ্রাক্-বর্ষা জরিপ অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব এলাকাতেই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি বেশি। এবার ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।


সিটি করপোরেশনের জোরালো কার্যক্রমের পাশাপাশি নগরবাসী সচেতন না হলে পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নিতে পারে এমন আশঙ্কায় করছেন স্বাস্থ্য 

বিশেষজ্ঞরা। সার্বিক দিক বিবেচনায় মনে হচ্ছেডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে

চলতি বছরের  জুলাই  পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত  হাজার ৮৭১ জন। এর মধ্যে গত 

২৪ ঘণ্টায় (১৯ জুলাই সকাল আটটা থেকে ২০ জুলাই সকাল আটটা পর্যন্তচলতি বছরে এক দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু  আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। এই সময়ে মারা গেছেন সাতজন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি 

হয়েছেন ৮৯৮ জন। দেশে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনো দেখা যায়নি। ২০১৯ সালে প্রথম ছয় মাসে মারা গিয়েছিলেন  জন। আক্রান্ত হয়েছিলেন  হাজার ২০৮ জন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক।

জানা গেছেস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল  এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বছরে তিনবার ঢাকা উত্তর  দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মশা জরিপ করে। প্রাক্-বর্ষাবর্ষা  বর্ষা-পরবর্তী জরিপ। গত ১৭ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত এবারের প্রাক্-বর্ষা জরিপ চালানো হয়েছে। ঢাকার দুই সিটির মোট ৯৮টি ওয়ার্ডের  হাজার ১৪৯টি বাড়িতে জরিপ 

পরিচালিত হয়। প্রাক্বর্ষা এই জরিপের ফলাফল গত  জুলাই রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য ভবনের মিলনায়তনে প্রকাশ 

করা হয়েছে। বিষয়টিকে বেশ উদ্বেগজনক বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেনএডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রæটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত।আর কতগুলো বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছেতা পরিমাপের সূচক হলো হাউস ইনডেক্স। প্রাক-বর্ষা মৌসুম জরিপের এই দুই সূচকেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের তথ্য তুলে ধরে 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা জানিয়েছে এর অর্থ হচ্ছেএসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। গত বছর ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৩টিতে  ইনডেক্স ২০-এর বেশি ছিল।


ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি৪০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি৫৮টি ওয়ার্ডে গেছেন জরিপকারীরা। এসব ওয়ার্ডের  হাজার ১৪৯টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪৯টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ডিএনসিসির ২৭১ এবং ডিএসসিসির ২৭৮টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

ঢাকা উত্তর সিটির মগবাজারআদাবরমোহাম্মদপুরমণিপুর  উত্তর বাড্ডা এলাকায় মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। আর দক্ষিণ সিটির নবাবপুরডিস্টিলারি রোডআজিমপুরহাজারীবাগকাঁঠালবাগান  সায়েন্স ল্যাব এলাকায় মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এবার এডিস মশা পাওয়া গেছে এমন বাড়ির শতকরা হারও (হাউস ইনডেক্সউদ্বেগজনক। সাধারণত কোনো ওয়ার্ডের হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে উদ্বেগজনক ধরা হয়। এবার ৯৮টি ওয়ার্ডের ৮০টি ওয়ার্ডেই হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি পাওয়া গেছে। গত বছর হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি ছিল ১৯টি ওয়ার্ডে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছেনজরিপের ফলাফলে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এবার মশার ঘনত্ব ২০১৯-২০ সালের থেকে অনেক বেশি। এই বছর দেরিতে বর্ষা এসেছেদেরিতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডেঙ্গু 

মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।জরিপের তথ্য অনুযায়ীএবার বহুতল ভবনে (প্রায় ৪৪ শতাংশএডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। এরপর সবচেয়ে বেশি লার্ভা (প্রায় ৪০ শতাংশপাওয়া গেছে একক বাড়ি  নির্মাণাধীন ভবনে। এসব স্থানে পানি জমে থাকা ভেজা মেঝেপ্লাস্টিক ড্রাম  পাত্র এবং ফুলের  টবে লার্ভা বেশি ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেনএডিস মশার নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা জটিল। বহুতল ভবনে সিটি করপোরেশনের একজন মশককর্মীর জন্য প্রবেশ করা কঠিন। নগরবাসীকে সম্পৃক্ত না করতে পারলে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল। ডেঙ্গুর হটস্পটগুলোকে (বেশি সংক্রমণ এমন এলাকাআলাদা গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। বিশেষ করে হটস্পটগুলোতে উড়ন্ত মশা মারতে ব্যবস্থা নিতে হবে।


জানা গেছেস্বাস্থ্য অধিদপ্তর কয়েক মাস আগে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করলেও ঢাকার দুই সিটি যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি বলে নগরবাসীর অভিযোগ তুলে ধরেন সাংবাদিকেরা। মূলতডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে দেরিতে ভর্তির কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৫০ জনের তথ্য পর্যালোচনা করে বলেছে বছর ডেঙ্গুতে যাঁরা মারা গেছেনতাঁদের ৮০ 


শতাংশের  মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে তিন দিনের মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেনএবার বছরের প্রথম ছয় মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত  মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের 

চেয়ে বেশি। দেশে সাধারণত জুনের পর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই আগামী দিনগুলোতে আক্রান্তের 

সংখ্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আর আক্রান্ত বেশি হলে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় এখনই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর  ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এমনকি তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা গেছেডেঙ্গু ভাইরাসের কোন স্বীকৃত টিকা বা ভ্যাকসিন নেই। সুতরাং প্রতিরোধ নির্ভর করে জীবাণুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ এবং তার কামড় থেকে সুরক্ষার উপর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পাঁচটি মৌলিক 

দিকনির্দেশনার মাধ্যমে একমুখী নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সুপারিশ করেছে:

(প্রচারসামাজিক সক্রিয়তা এবং জনস্বাস্থ্য সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে আইন প্রণয়ন, ()  স্বাস্থ্য  অন্যান্য বিভাগসমূহের মধ্যে সহযোগিতা (সরকারী  বেসরকারী), (সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণে সুসম্বদ্ধ প্রয়াস, (যে কোন হস্তক্ষেপ যাতে সঠিক লক্ষ্যবস্তুতে হয় তা সুনিশ্চিত করতে প্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ()  স্থানীয় অবস্থায় পর্যাপ্ত সাড়া পেতে সক্ষমতা বৃদ্ধি। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমাদের 

অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক নয়। ফলে দেশে ডেঙ্গুর দ্রুত বিস্তার ঘটছে।

মূলতডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার প্রাথমিক পদ্ধতি হলো এর বৃদ্ধির পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলা। পানির 

আধার খালি করে অথবা কীটনাশক প্রয়োগ করে অথবা এইসব জায়গায় বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল এজেন্টপ্রয়োগ করেযদিও spraying

with অর্গ্যানোফসফেট বা পাইরেথ্রযয়েড স্প্রে করাকে খুব লাভজনক ভাবা হয় না।


 স্বাস্থ্যের উপর কীটনাশকের কুপ্রভাব এবং কন্ট্রোল এজেন্টের ব্যয়বহুলতার কথা মাথায় রেখে পরিবেশ শোধনের মাধ্যমে জমা পানি কম করাটাই নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভাল উপায়।


 মানুষজন পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরেবিশ্রামের সময় মশারি ব্যবহার করে এবং  প্রতিরোধক রাসায়নিক প্রয়োগ করে মশার কামড় এড়ানোর পরামর্শও এসেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে পুরোপুরি কার্যকর কোন চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি। তবে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধী টিকা কয়েকটি দেশে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এই টিকা শুধু একবার সংক্রমিত হয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর। একাধিকবার আক্রান্ত হলে তা মোটেই কার্যকর নয়। মূলত এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। তাই মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে।  জন্য এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী বিভিন্ন আধারেযেমনকাপটবটায়ারডাবের খোলসগর্তছাদ ইত্যাদিতে আটকে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরিধান করতে হবে।

ডেঙ্গু একটি ভয়াবহ মশকবাহী  ভাইরাস জনিত রোগ। সম্প্রতি এই রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে আমাদের দেশে। তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম এবং বেশি করে তরল খাবার গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জ্বর 

কমাতে প্যারাসিটামল এবং  প্রায়শ রোগীর শিরায় স্যালাইন দেয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। মারাত্মক রূপ ধারণ 

করলে রোগীকে রক্ত দেয়ারও আবশ্যকতা রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে হলে কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক  

ননস্টেরয়েডাল প্রদাহপ্রশমী ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকবে বলা হয়। কারণএতে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে 

রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছেডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করতে চলেছে।এমতাবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গণসচেতনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল সনাক্তকরণ এবং বংশবিস্তার রোধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণরোগ নিরাময় চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়তর। একই সাথে আক্রান্তদের  দ্রুত  চিকিৎসা প্রদানের জন্য দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ সহ জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা দরকার। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।


আরও খবর



নিপুণের গলায় মালা পরালেন মিশা-ডিপজল

প্রকাশিত:শনিবার ২০ এপ্রিল ২০24 | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়া হলো না চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারের। ভোট যুদ্ধ্বে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনোয়ার হোসেন ডিপজলের কাছে পরাজিত হয়েছেন তিনি। তবে পরাজিত হয়েও ফুলের মালা উঠেছে নিপুণের গলায়।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে শিল্পী সমিতির নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার খোরশেদ আলম খসরু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুই প্যানেলের প্রার্থীরা। তখনই ঘটনাটি ঘটে। পরাজিত নিপুণ বিজয়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন। এরপরই নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেই মালা খুলে নিপুণের গলায় পরিয়ে দেন।

গতবার জায়েদ খানের সঙ্গে হেরে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন নিপুণ। আদালতে গিয়ে নিজের নামে নিয়ে এসেছিলেন সম্পাদকের পদ। তবে এবারের নিপুণ যেন তার উল্টো। মিশা সওদাগরও তার এমন আচরণের প্রশংসা করে বলেন, আজকের এই নির্বাচন নামে মাত্র একটি নির্বাচন। সত্যিকার অর্থে আমরা এক পরিবার। তবে নির্বাচনের ফলাফল শেষে নিপুণ আজ যেটা করলো তা নজির হয়ে থাকবে। এমনটাই হওয়া উচিত।

এ নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেল নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করেছে। সভাপতি পদে মিশা সওদাগর পেয়েছেন ২৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মাহমুদ কলি। তিনি পেয়েছেন ১৭০ ভোট। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ডিপজলের পক্ষে ভোট পড়েছে ২২৫টি এবং নিপুণ আক্তার পেয়েছেন ২০৯ ভোট।

গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় অভিনেতা ডা. এজাজের (অভিনেতা ও চিকিৎসক এজাজুল ইসলাম) ভোট প্রদানের মাধ্যমে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোট গ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৫টায়।


আরও খবর



চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রি

প্রকাশিত:রবিবার ০৭ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

স্বস্তিদায়ক আবহাওয়ার খোলস ভেঙ্গে হঠাৎ করেই তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য বিভাগের জনজীবন। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় শনিবার (৬ এপ্রিল) দেশের ও এই মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এতে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। সঙ্গে রোজাদার খেটে খাওয়া মানুষদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঈদে মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা জমে উঠলেও ভ্যাপসা গরমের কারণে দিনের বেলা লোকজন বাইরে তেমন বের হচ্ছেন না।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান তাপমাত্রা রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে, গত ১ এপ্রিল থেকে জেলার ওপর দিয়ে মৃদ ও মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহের কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতেও পরামর্শ দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্টোকের ঝুঁকি থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোজাদারদের সন্ধ্যার পর থেকে বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে। শিশু-কিশোর ও যারা রোজায় থাকছেন না তাদেরকে ঘন ঘন পানি ও শরবত পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে, চলমান তাপ প্রবাহের কারণে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখা, ধানের শিষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। আম গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ প্রদান করা; প্রয়োজনে গাছের শাখাপ্রশাখায় পানি স্প্রে করা যেতে পারে। সবজি ক্ষেতে মাটির ধরন বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী ২ থেকে ৩টি সেচের ব্যবস্থা করা।

জেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা জানান, অতিরিক্ত গরমে মাঠে কৃষি কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। রোজায় তারা দিনে বেশি কাজ করতে পারছেন না।

শহরে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, আর কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। বেচাকেনা জমে উঠলেও অতিরিক্ত গরমের কারণে দুপুর ১২টা পর থেকে বিকেল পর্যন্ত মার্কেটগুলোতে লোকজনের আনাগোনা খুবই সীমিত।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, আজ শনিবার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলছি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চলমান তাপ প্রবাহ আরও বিস্তার লাভ করতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।


আরও খবর



স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট লাগবে হজযাত্রীদের

প্রকাশিত:শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

হজযাত্রীদের টিকা গ্রহণের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট লাগবে। সরকার নির্বাচিত মেডিকেল সেন্টারগুলো থেকে টিকা নেওয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কিছু রিপোর্ট সাথে আনতে সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখা থেকে জারিকৃত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউরিন আরএমই, আরবিএস, এক্সরে চেস্ট পিএ ভিউ, ইসিজি, সেরাম ক্রিয়াটিনিন, সিবিসি উইথ ইএসআর, ব্লাড গ্রুপিং এন্ড আরএইচ টাইপিং।

মোট ৮০টি স্বাস্থ্য সেবা ও টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকা গ্রহণ করতে পারবেন হজযাত্রীরা। সব জেলার সিভিল সার্জন অফিস ছাড়াও কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, সরকারী কর্মচারী হাসপাতাল, ফুলবাড়ীয়া, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগ, বাংলাদেশ সচিবালয় ক্লিনিক, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহম্মদ আলী হাসপাতাল ও দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতাল।

এ সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের জন্য ১৬১৩৬ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।


আরও খবর



ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চির ভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন।

১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে পঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রণীত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এ দিন থেকে স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকচক্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বেআইনিভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ১৯৭১র ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ন্যায়-নীতি বর্হিভূত এবং গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন।

 এই অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এবং এ.এইচ.এম কামারুজাজামানকে স্বরাষ্ট্র এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। মেহেরপুর হয়ে ওঠে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাজধানী। মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার দুঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে। ফলে, সরকারের প্রতিনিধিগণ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে কার্যক্রম চালাতে থাকে। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

নবজাত রাষ্ট্রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের লক্ষে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়।

 এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। অবশেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত দিনটিকে বরাবরের মতো স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সবার সাথে একত্রিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো যথাযথ মর্যাদা এবং গুরুত্বের সাথে স্মরণ ও পালন করবে।


আরও খবর



৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলো এবারের তাপপ্রবাহ

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। আগুন ঝরা গরমে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশজুড়ে তাপদাহে ঘরে কিংবা বাইরে সবখানেই কাতর সবাই।

তপ্ত দুপুরে গরমের তীব্রতায় নাগরিক জীবনের এমন হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এবার এই এপ্রিল মাসে টানা যত দিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরেও হয়নি। গত বছর টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ হয়েছিল। এবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে।

আজ শুক্রবারও তাপপ্রবাহ বইছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আজ সকাল থেকেই বয়ে গেছে গরম হাওয়া। রোদের তেজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে গরমের তীব্রতাও।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গতকাল পর্যন্ত হিসাবে চলতি মাসে ২৩ দিন তাপপ্রবাহ অব্যাহত ছিল। ১৯৪৮ সাল থেকে এক বছরে তাপপ্রবাহের দিনের রেকর্ড আজ ভেঙে গেছে।

টানা অন্তত দুই দিন তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তা তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী বিভাগে গত ১ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ১১ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি। চলতি বর্ষাপূর্ব মৌসুমে দেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৪৮ থেকে তাদের কাছে বিভিন্ন স্টেশনের আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত আছে। তবে সব বছরে সব স্টেশনের উপাত্ত নেই। উপাত্তগুলো একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে আছে ১৯৮১ সাল থেকে। তারপরও আগের স্টেশনগুলো বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ১৯৪৮ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ হয়েছে এবারের এপ্রিল মাসে।

এর আগে ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা টানা ছিল না। কিন্তু এবার টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ হলো।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এবারের মতো তাপপ্রবাহ টানা আগে হয়নি। তিনি বলেন, এতে বলা যায়, ৭৬ বছরের রেকর্ড এবার ভেঙে গেল। এবার টানা যেমন তাপপ্রবাহ হয়েছে, আবার এর বিস্তৃতিও বেশি ছিল। এ বছর দেশের ৭৫ ভাগ এলাকা দিয়ে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, যা আগে কখনোই ছিল না।

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, এপ্রিল বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস। কিন্তু স্বাধীনতার পর এবারের এপ্রিলই সবচেয়ে উষ্ণ যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এল নিনোর প্রভাবে এই তাপপ্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে, যা বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রভাব ফেলছে এবং এটি এই মাসের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

এপ্রিল উষ্ণতম মাস হওয়ায় বরাবরই এ সময়ে দেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে উল্লেখ করে অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, এটা অস্বাভাবিক নয়।

তিনি আরও বলেন, এবার টানা দুই সপ্তাহ ধরে তাপপ্রবাহ থাকায় ও বৃষ্টিহীন পরিস্থিতি বিরাজ করায় গরমের অনুভূতি বেড়েছে। জলীয়বাষ্পের পরিমাণটা বেশি, যে কারণে অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। স্বাভাবিক যা থাকার কথা, তার চেয়ে ৪ থেকে ৭ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা উঠছে বিভিন্ন এলাকায়।


আরও খবর