লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুরে কবলে পড়া জাহাজে থাকা বাংলাদেশী ২৩ নাবিকদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের রাখালিয়া গ্রামে। প্রায় ১ মাস আগে তার বাবা আজহার মিয়া মারা যান। এখনো গৃহকর্তা হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি পরিবারটি। এরমধ্যেই পরিবারের ছোট ছেলে সাগরে ডাকাতদের কবলে রয়েছে। এ শোকে আইয়ুবের মা হোমায়রা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কিছুক্ষণ পর পরই ছেলেকে বুকে চেয়ে চিৎকার করে উঠেন। আইয়ুব বাবা তুমি কই বাবারে, কথা বলতে বলতে মূর্ছা যাচ্ছেন ৬০ বছর বয়সী মা হুমায়ারা বেগম। হাতে তার মোবাইল ফোন। ফোনে রয়েছে ছেলের ছবি, আর চোখের কোণে অশ্রু। ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে গত মঙ্গলবার সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি সেসহ আরো ২২ নাবিক। তার উদ্বিগ্ন মা ছুটে চলেছেন আর কোন মানুষ দেখলে বলতে থাকেন আমার বাবা কি হয়েছে। বাবা আইয়ুব খান এসেছে? কাঁদছেন আর বলছেন, ‘আমার মানিক কোথায়? তারে আমার সামনে আনেন। আমি আমার মানিকরে বুকে নেব।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রোজার ইফতারের পর থেকে খবর পেয়ে মূর্ছা যান ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খানের মা হুমায়ারা বেগম (৬০)। আইয়ুব খানের মা হুমায়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা যখন ইফতার করছিলাম, এর মাঝেই আমার ছেলে তার ভাই রাব্বীর সাথে ফোনে কথা হয় জাহাজটি সোমালিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’‘টাকা না দিলে মেরে ফেলবে’, শুনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন আইয়ুব খান এর মাসহ পরিবারের সদস্যরা। মুক্ত করতে মালিকপক্ষের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে চলেছেন তারা।
আইয়ুব লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিরন বেপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে। তিনি রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রামগঞ্জের ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া একাডেমি থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। প্রায় ১ বছর ধরে ইন্টার্নি করছে আইয়ুব ।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর রাখালিয়া গ্রামের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বাড়ী উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কথা শুনে ঢাকা থেকে টেলিফোনে কথা বলেন ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের মেজো ভাই রাব্বী। বলছেন, মিডিয়া বেশি কিছু বলতে পারবো না। তবে বিপদে আছেন তারা। টাকা না দিলে মেরে ফেলবে, জিম্মি ২৩ নাবিক পরিবারের মতো চরম উৎকন্ঠায় জিম্মি লক্ষ্মীপুরের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের পরিবার। মুক্তিপণ না পেলে জলদস্যুরা তার ভাইসহ অন্যদের মেরে ফেলবে। মঙ্গলবার বাংলাদেশী সময় সন্ধ্যায় মেজো ভাই রাব্বীর সাথে সর্বশেষ কথা ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের সাথে। তখন আইয়ুব খান ফোনে বলছেন জলদস্যুরা তাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের মেরে ফেলবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাশে সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এ সময় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। এদিন বিকেলে জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। জাহাজে লক্ষ্মীপুরের আইয়ুব খানসহ মোট ২৩ জন নাবিক জিম্মি। এর মধ্যে জিম্মি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া গ্রামের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানও রয়েছে। তিনি বিয়ে না করলে ও তাদের সংসারে রয়েছেন দুই ভাই এক বোন।