শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, স্টাফ রিপোর্টার :
নওগাঁর প্রত্যন্ত গ্রাম্যঅঞ্চল শিলমাদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শ্রী কৃষ্ণ চন্দ্র প্রামাণিক দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়ে পাঠদান না করে পাঠদান করছেন নওগাঁর রানীনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসে। যার কারণে ঐ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের (লেখা-পড়া) পাঠদান।
বিদ্যালয় এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান বলেন, ১৮৬০ সালে স্থাপিত শিলমাদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর মোট শিক্ষার্থী ১শ' ৫ জন। প্রতিদিন গড়ে ৮০-৮৫ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে এসে পাঠ গ্রহণ করেন। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষক সংকটের কারণে বছরের বেশি সময় মাত্র একজন শিক্ষককে পাঠদান করাতে হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মোট পদ সংখ্যা ৬টি হলেও বর্তমান এ বিদ্যালয়ে রয়েছেন মাত্র ৪জন। শিক্ষকদের মধ্যে একজন প্রশিক্ষণের জন্য বাহিরে আছেন আর শিক্ষক শ্রী কৃষ্ণ চন্দ্র প্রামাণিক অঘোষিত ভাবে প্রায় বছর যাবত উপজেলা শিক্ষা অফিসে আইসিটি বিষয়ে কাজ করে আসছেন। যার কারণে তিনি বিদ্যালয়ে পাঠদান করছেন না। আবার অনেক সময় আমাকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে শিক্ষা অফিসে দৌড়ঝাঁপ করতে হয় ফলে আমিও সঠিকভাবে পাঠদান করাতে পারি না। যার ফলে সহকারি শিক্ষক ইউনুছ আলী জোয়াদারকে পুরো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করাতে হচ্ছে। মূলত এ-একজন শিক্ষক ৮০-৮৫ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করার ফলে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের (পাঠদান) লেখা-পড়া কার্যক্রম। অতিদ্রুত যদি এই শিক্ষক সংকট দূর করা না যায় তাহলে বিদ্যালয়ে আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করবে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। ইতি মধ্যেই গত বছরের চেয়ে চলতি বছর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কমেছে।
নওগাঁর রানীনগর উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে শিক্ষক শ্রী কৃষ্ণের প্রভাবে চলছে রানীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
তার পছন্দমাফিক শিক্ষকদের কাজ খুব সহজেই হয় আর অপছন্দের শিক্ষকদের কাজ আটকে রেখে নানা ভাবে হয়রানী করে আসছেন তিনি। শিক্ষা অফিসের সবাই বর্তমানে শ্রী কৃষ্ণের উপর নির্ভরশীল। শিক্ষা অফিস বর্তমানে তার নেতৃত্বে দালালের আতুরঘরে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা শ্রী কৃষ্ণকে শিক্ষা অফিসে নয় তার কর্মস্থলে তাকে দেখতে চাই।
এব্যাপারে সহকারি শিক্ষক শ্রী কৃষ্ণ চন্দ্র প্রামাণিক সংবাদকর্মীদের বলেন, অফিসে আইসিটি বিষয়ে দক্ষ কোন জনবল না থাকার কারণে সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন আমাকে অঘোষিত ভাবে বিদ্যালয় থেকে এনে শিক্ষা অফিসের কম্পিউটারের কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করেন। এরপর থেকে আমি অফিসেই কাজ করছি।
তবে আমিও আর এই অফিসে কাজ করতে চাই না। দিন দিন অফিসে কাজের চাপ অনেক টাই বেড়ে যাচ্ছে।
এছাড়া অনেকের কাছে মন্দ হয়ে গেছি। তাই আমি আমার কর্মস্থল বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেস্টা করছি কিন্তু কর্মকর্তারা আমাকে যেতে দিচ্ছে না।
এব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু রায়হান বলেন, আগের স্যার শ্রীকৃষ্ণকে অফিসে নিয়ে আসেন। অফিসে কম্পিউটার ও আইসিটি বিষয়ে জনবল না থাকার কারণে তাকে দিয়ে অফিসের কাজ চালিয়ে নিতেন। অফিস থেকে একাধিকবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অফিসে জনবল নিয়োগদানের জন্য লিখিতভাবে জানালেও কোন লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই শ্রীকৃষ্ণকে দিয়ে অফিসের কাজ করে নেওয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষক না থাকায় ঐ বিদ্যালয়ের পাঠদানও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমি এই বিষয়টি আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত জানাবো।