রাজধানীসহ
সারাদেশে দু’দিন
ধরে টানা বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জরুরি প্রয়োজন
ছাড়া ঘর থেকে বের হননি অনেকে। রিক্সা, ব্যক্তিগত গাড়ি,
বাসসহ সবধরনের পরিবহনে ছিল ধীর গতি। গণপরিবহনও ছিল কম। তারপরেও
রাজধানীতে ছিল যানজটের ভোগান্তি।
বৃহস্পতিবার (৫
অক্টোবর) সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। বিকেলের দিকে বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা
বাড়ে। শুক্রবারও (৬ অক্টোবর) ছিল একই অবস্থা। সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরে।
সন্ধ্যারপরে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
এতে বিভিন্ন সড়কে
পানি জমে যায়। এ সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রধান প্রধান সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র
যানজটের। চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। যানজট আর জলাবদ্ধতার কারণে ১০মিনিটের পথ
যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা।
সবচেয়ে বেশি কষ্ট
ভোগ করছেন শহরের ছিন্নমূল, খেটে খাওয়া সাধারণ
মানুষ। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তাদের বাইরে বের হতে হচ্ছে। আর কর্মজীবী মানুষেরও যেন
কষ্টের শেষ নেই। একদিকে অঝরে বৃষ্টি হচ্ছে অপরদিকে গণপরিবহন সমস্যা। শুক্রবার
ছুটির দিন থাকায় অফিসগামী মানুষের ভিড় ছিল কম।
উত্তরার একটি
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন হবিগঞ্জের সাইফুল ইসলাম। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর
দক্ষিণখান এলাকায়। শুক্রবার সকালে রাজধানীর মৌচাকে আত্বীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যেতে
উত্তরার জসিমউদ্দন মোড়ে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। ভারী বৃষ্টিতে
পরিবার নিয়ে ভিজে একাকার।
তিনি বলেন, একদিকে বৃষ্টি অপর দিকে গণপরিবহন সংকট। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ভাড়া চায়
চার পাঁচ গুণ। একদম বাজে অবস্থা। কি করবো যেতে হবে। পারিবারিক অনুষ্ঠান। না গেলে
চলবে না। তাই বাধ্য হয়েই যাচ্ছি।
রাজধানীর মগবাজার
মোড়ে গণপরিবহনের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন শরীয়তপুরের ফাহিম। যাবেন কারওয়ান বাজার।
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কাজ করেন তিনি। তিনি বলেন, কি করবো, উপায় নেই। অফিসে যেতে হবে। কিন্তু বাইরে
পরিস্থিতি খুব খারাপ। রাস্তায় পানি জমে গেছে, বাসতো দুরের
কথা রিক্সাও পাওয়া যাচ্ছে না।
শন্তিনগরে রাস্তার
পাশে বৃষ্টিতে ভিজে রিক্সা চালাচ্ছিলেন আকবর মিয়া। বললেন, কি আর করবো। রিক্সার চাকা না ঘুরলে চুলায় আগুন জ্বলবে না। তিন সন্তানের
জনক আকবর মিয়া থাকেন রাজধানীর শহীদনগর এলাকায়। বললেন, রোদে
পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি। আমাগো দেখার কেউ নাই। দু:খের কথা বলার
জায়গাও নেই। শুকরিয়া তবু বেঁচে আছি।
শুক্রবার দিন শেষে
সন্ধ্যা নেমেছে। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। রাজধানীর মালিবাগ রেলগেটে রাস্তার পাশে খুপড়ি
ঘরে ভিজে একাকার আকাশী বেগম। কেমন আছেন? প্রশ্ন
করতেই বললেন, `আমাগো আর থাহা, রোদে
পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি, উপরওয়ালা যেইভাবে
রাখছেন। হেইভাবেই আছি। দুই দিন ধরে ভিজা কাপড় পড়ে আছি। আমাগো রোদ হইলেইবা কি,
আর বিস্টি হইলেইবা কি, আমাগো কষ্ট কেউ বুঝে না’।
রাজধানীর মালিবাগ,শান্তিনগর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর,
মহাখালী, বনানী, মিরপুরসহ
বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার বিভিন্ন
সড়কে জলাবন্ধতা দেখা দিয়েছে।
সন্ধ্যার পর
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা দেয়। বাংলামোটর, শাহবাগ, ধানমন্ডি, কারওয়ান
বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মহাখালী, বনানীতে যানজট দেখা যায়। রাতে বৃষ্টি বাড়ার
সঙ্গে সঙ্গে যানজটে আটকে পড়া মানুষের ভোগান্তিও আরও বাড়ে।
এদিকে শনিবার (৭
অক্টোবর) থেকে বৃষ্টি কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এদিন সকাল থেকে এই
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো রাজধানীর কোনো এলাকায় বৃষ্টির খবর পাওয়া যায়নি। এর
মধ্যে কিছু এলাকায় সূর্যের দেখা মিলেছে আবার কিছু এলাকা মেঘাচ্ছন্ন।
মূলত মৌসুমি বায়ু
ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গত কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন
স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা
বলছেন, আগামীকাল রবিবার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়ে
রোদের দেখা মিলতে পারে। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) রাতে বৃষ্টিভোগান্তির মধ্যেই এমন
স্বস্তির বার্তা দেয় আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ ওমর
ফারুক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায়
রাজধানীজুড়ে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ না বাড়লেও শনিবার পর্যন্ত
এই অবস্থা থাকবে। তবে ওইদিন দুপুরের মধ্যে বৃষ্টি কমে আসবে। কিন্তু দিনভর আকাশ
মেঘলা থাকবে। তবে রোববার থেকে আকাশ পরিষ্কার হবে। একইসঙ্গে বাড়বে তাপমাত্রাও।
অন্যদিকে আবহাওয়ার
এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বেশি
সক্রিয় থাকায় সাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রাম, মোংলা
ও পায়রা বন্দর এবং কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে থাকা নৌযানগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।