মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী দারুসসুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসায় বিধি ও জ্যেষ্ঠতা ভঙ্গ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দ্বায়িত্ব পালনের অভিযোগে উঠেছে মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করেই অবৈধ ভাবে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত হিসেবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ছয়মাসের বেশি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকার নিয়ম না থাকলেও বছরের পর বছর এই মাদ্রাসাটি চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। ২১০৮ সাল থেকে মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের কোন উদ্যোগ না নিয়ে অবৈধ ভাবে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সালেহ মোঃ খাইরুল্লাহ ক্ষমতা পেয়ে মাদ্রাসার বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করেন এমনও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট সুবিদখালী দারুসসুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শাম্সের আলী অবসরে যাওয়ার পরে জ্যেষ্ঠতা ভঙ্গ করে ও উপাধ্যক্ষকে বাদ দিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ও পরিচালনা কমিটির ক্ষমতাবলে মাদ্রাসার সহকারি অধ্যাপক মাওলানা মো. খলিলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্বে নিয়োজিত হন। এরপরে তিনিও গত ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারী অবসরে যাওয়ার পরে আবারও জ্যেষ্ঠতা ভঙ্গ করে ও সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাঁর পুত্র প্রভাষক আবু সালেহ মো. খায়রুল্লাহকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যথা নিয়মে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও সিনিয়র সহকারী অধ্যাপকে দায়িত্ব দেয়ার বিধান থাকলেও পরিচালনা কমিটি পেশি শক্তির প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ ভাবে একজন প্রভাষককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। পিতা-পুত্র মিলে এই মাদ্রাসায় প্রায় চার বছর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী আরবি বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী কোন মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদ শূণ্য হলে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে বিধি মোতাবেক শূন্য পদ পূরন করার কথা থাকলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার চার বছর অতিক্রম করার সুফল অবৈধ ভাবে এখন ষোলকলাই বহন করছেন পিতা-পুত্র। আর এমন সুযোগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নানাদিক দাবড়ে লুটেপুটে খেয়েছেন। মাদ্রাসার ভর্তি,ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়, বিভিন্ন পরীক্ষার ফল বিবরণী ও পরীক্ষার খাতা যাচাই-বাছাইকরণ ফি,ভর্তির অতিরিক্ত ফি,উপবৃত্তি ফি,মাদ্রাসার ষ্টল দোকান ভাড়া,রেজিস্ট্রেশন ফি সহ নানাভাবে অর্থ আদায় করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়,উপজেলার সুবিদখালী দারুসসুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ সালে। মাদ্রাসায় বর্তমানে চার শতাধিক ছাত্র রয়েছে। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ শূণ্য পদ রয়েছে ১৫টি ও কর্মচারী ৫জনের স্থলে ২জন। মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ ও কমিটি না থাকায় শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে জটিলতা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষকরা জানান, সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে বিধি বর্হিভূত ভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েছে প্রভাষক আবু সালেহ মো. খায়রুল্লাহ। গত বছরের ২৫ মার্চ তিনি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রারের স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া কমিটি গঠন করেন এবং মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ৫ মাসের বেতন বিলে অবৈধ স্বাক্ষর করে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছেন। অবসরে যাওয়া সাবেক অধ্যক্ষের ৩ লক্ষ টাকা ভূয়া ভাউচার করে তহবিলে জমা না দিয়ে নিজেই খরচ করেন। তাদের কারনে মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। মাদ্রাসায় সরকারি ১৪টি কম্পিউটারসহ ল্যাব ছিলো। বর্তমানে ল্যাবের ভবন থাকলেও কম্পিউটার নেই। মাদ্রাসায় দান করা এয়ার কন্ডিশনার(এসি) চলছে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বাস ভবনে। প্রতিষ্ঠানের জমিতে অগ্রিম অর্থ নিয়ে ১৬টি ষ্টল নির্মান করেন এবং ষ্টলের ভাড়ার কোন হিসাব মাদ্রাসার রেজিষ্ট্রারে নেই বললেই চলে। সাবেক এই অধ্যক্ষের নিজের নামেও ১টি ও ভাইয়ের নামে ২টিসহ মোট ৩টি ষ্টল দখল করে আছেন এবং ভাড়ার টাকা জমা না দিয়ে বছরের পর বছর তা আত্মসাৎ করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন সময়ে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের চাকরী দেয়ার কথা বলে তুলেছেন অর্থ। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মাদ্রাসার আয় - ব্যায়ের কোন হিসাব নেই। এ অনিয়ম জানাজানি হলে মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মচারীদের চাপের মুখে গত বছর আগষ্ট মাসে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সালেহ মোঃ খাইরুল্লাহ মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারি অধ্যাপক (আরবী) মোঃ হাবিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। কিন্তু এখনও তাকে মাদ্রাসার কোন চার্জ বুঝিয়ে না দিয়ে সাবেক অধ্যক্ষ আবু সালেহ মোঃ খাইরুল্লাহ ভয়ভীতি দেখান ও পিতাকে গভনিং বডির সদস্য নেয়ার জন্য গোপনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও মাদ্রাসার সংযুক্ত ইয়াতিম খানায় তাঁর পিতা সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ খলিলুর রহমান ৪০ বছর যাবৎ সেক্রেটারি হিসেবে রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সালেহ মো. খাইরুল্লাহ বলেন, অভিযোগ হয়েছে আমি শুনেছি। এটা মাদ্রাসার একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এখানে অনিয়মের কিছু নেই। মাদ্রাসার স¦ার্থে পরিচালনা কমিটি আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি অধ্যক্ষের পদ ছেড়ে দিয়েছি। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিত্বে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন শিক্ষক অসুস্থ ছিলেন তাই পরিচালনা কমিটি আমাকে যোগ্য মনে করেছেন বলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম। আর এখন আমি অধ্যক্ষের পদে নেই। যে দায়িত্বে আছেন তাঁর কাছে জানেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। অভিযোগ যার নামে হয়েছে তাঁর কাছে জানতে পারেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রেজাউল কবীর বলেন, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মাদ্রাসায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। এটা না করে থাকলে বিধি ভঙ্গ করে কাজ করেছে পরিচালনা কমিটি। এখানে সিনিয়রদের বাদ দিয়ে প্রভাষককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া অন্যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েমা হাসান বলেন, নীতিমালা বহির্ভূত কোন পদায়ন/দায়িত্ব পেয়ে থাকলে এবং অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।