রোকসানা মনোয়ার : স্বপ্ন
বাস্তবে ধরা দেওয়ার দিন আজ। গত বছরের এই দিনে ঘটা করে দেশের ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার
দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা। স্বপ্নের এই সেতু উদ্বোধনের পরদিন (২৬ জুন) থেকেই যান চলাচলের জন্য
উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
উদ্বোধনী
দিনে সকাল ১০টার কিছু আগে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে
মাওয়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখানে সুধী সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন। এরপর
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধন খাম ও
সিলমোহর প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান। একপর্যায়ে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী
ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করে মোনাজাতে অংশ নেন।
পরে একই
দিন দুপুর ১২টায় পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর টোল দিয়ে গাড়িযোগে পদ্মা সেতুতে ওঠেন সরকারপ্রধান। ওইসময় সেতুতে উঠে ১৪ মিনিট
দাঁড়ান তিনি। পরে সেখানে সেনা ও বিমান বিমান বাহিনীর কসরত দেখেন। একপর্যায়ে
জাজিরার উদ্দেশে রওনা হন।
পথে
দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে জাজিরা প্রান্তে উদ্বোধন ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করে আবারও
মোনাজাত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেখান থেকে মাদারীপুরের শিবচর
উপজেলার কাঁঠালবাড়ির উদ্দেশে সড়কপথে যাত্রা করে সেখানে আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ
নেন সরকারপ্রধান।
স্বপ্নের এই সেতু উদ্বোধনের পরদিন আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর প্রথম দিনেই (সকাল ৬টা থেকে পরদিন একই সময় পর্যন্ত) ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা টোল আদায় হয়। সবমিলিয়ে প্রথম মাসেই (২৬ জুন থেকে ২৪ জুলাই) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুতে টোল আদায় হয় ৭৪ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ টাকা।
পদ্মা সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এতে দেশের বৃহত্তম এই সেতুতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রবিবার (২৫ জুন) সেতু ভবনের সম্মেলনকক্ষে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০২২ সালের ২৫ জুন থেকে শনিবার (২৪ জুন) রাত ১২টা পর্যন্ত পদ্মা সেতু দিয়ে ৫৬ লাখ ৭৫ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। এসব থেকে আয় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ২৩ লাখ ৯৬ টাকা। যা রবিবার বিকেল নাগাদ ৮০০ কোটিতে উন্নীত হবে। রাষ্ট্রপতি ছাড়া প্রত্যেক নাগরিকের টোল প্রদান বাধ্যতামূলক।
দেশের
সবচেয়ে দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয়েছে।
নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আদায় হওয়া টোল
থেকে গত ৫ এপ্রিল প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি বাবদ ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৪৯ টাকা
সরকারকে পরিশোধ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)।
সবশেষ গত ১৯ জুন বাস্তবে ধরা দেওয়া স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ঋণের আরো দুই কিস্তির টাকা পরিশোধ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি বাবদ এই দফায় মোট ৩১৬ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩ টাকা পরিশোধ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দ্বিতীয় এই চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।