মাসুদ উল হাসান,জামালপুর :
বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে চলছে দ্বন্ধ। নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মেম্বাররা। অপরদিকে মেম্বারদের অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্য ও ভিত্তিহীন দাবি করে করেছেন চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতি। এই ঘটনায় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহনা জিন্নাত।
জানা যায়, ভিজিডি কার্ডের তালিকা প্রনয়নে অনিয়ম, সরকারি কৃষিপণ্য আত্মসাৎ, টিসিবির কার্ড বিতরণে অনিয়ম, টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে অনিয়ম, ইজিপিপি প্রকল্পে লেবার তালিকা প্রনয়নে অনিয়ম, মাতৃত্বভাতার তালিকা প্রনয়নে অনিয়ম সহ ৭ দফা অভিযোগ তুলে ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা দাবি করেছেন মেম্বাররা। গত ২৫ জানুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ইউপি সদস্যরা। অভিযোগের কপি স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়,স্থানীয় সংসদ সদস্য,বিভাগীয় কমিশনার,জেলা প্রশাসক ও উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর দেন তারা। অভিযোগে তারা চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করেন।
অপরদিকে অভিযোগের কপিতে স্বাক্ষর থাকলেও সেটা ভুয়া বলে দাবি করেছেন ৭-৮-৯ নং ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য সুবর্না বেগম। তিনি বলে বলেন,গত ২৪ জানুয়ারি রাত দুইটার দিকে সকল মেম্বার আমার বাড়িতে এসে আমার কাছে এসে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থায় স্বাক্ষর চায়। তারা অনেক জোড় জবরদস্থি করলেও আমি কোন স্বাক্ষর দেইনি। পরবর্তীতে তারা আমার স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশন করেছে। আমি চেয়ারম্যানের অপসারণের পক্ষে নই। এছাড়া যে প্রকল্প নিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে সে প্রকল্পের সভাপতি আমি নিজেই। প্রকল্পের কাজও শেষ। সেই প্রকল্পের সাথে চেয়ারম্যানের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার স্বাক্ষর জাল করার কারনে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিব।
ইজিপিপি প্রকল্পের শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমি ইজিপিপি প্রকল্পের একজন শ্রমিক। আমি চেয়ারম্যানের সাথে বা কোন দালালের সাথে টাকা লেনদেন করি নাই। সরকারী নিয়ম অনুয়ায়ি আমি শ্রমিক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছি এবং কাজ করে যাচ্ছি। মেম্বাররা ইজিপিপি প্রকল্পের যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়।
ধানুয়া উত্তরপাড়া বাইতুস সালাম জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জানান, মসজিদের নামে দেয়া প্রকল্পের সমুদয় টাকা মসজিদের উন্নয়ন খাতেই ব্যয় হয়েছে। গ্রামবাসী ও মসজিদ কমিটি বিষয়টি জানেন। এটা নিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছামিউল হক জানান,চেয়ারম্যানের আচরনে মেম্বাররা সবাই অতিষ্ঠ। তিনি কাউকে মূল্যায়ন করেন না। তাছাড়া চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বাধ্য হয়ে আমরা সবাই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে চেয়ারম্যানের অপসারণ চাই।
ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতি বলেন,একটি কুচক্রি মহল দীর্ঘদিন যাবত আমার বিরুদ্ধে নানা ভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। তাদের ইন্দনে মেম্বাররা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করিনি আর করবোও না। আমি হলফ করে বলতে পারি একটা অভিযোগও সঠিক নয়। তিনি আরো বলেন, কতিপয় মেম্বার কয়েকজন মেম্বারের স্বাক্ষর জাল করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে আমার ব্যাক্তিগত, পারবিারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অহনা জিন্নাত বলেন,চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মেম্বাররা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে । তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।